সুপারিশের ৮ বছর পর বিসিএস ক্যাডার হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন মোহাম্মদ ফয়সাল আকবর। তবে এত বছর পরও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এর সুস্পষ্ট জবাব পেলেই যোগদান করার কথা ভাববেন বলে জানিয়েছেন ফয়সাল। ভেরিফিকেশনের সময় তার বাবাকে আটকও করা হয়েছিল। ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ফয়সাল আকবর।
স্ট্যাটাসে ফয়সাল লিখেছেন, ৮ বছর পর অবশেষে ৩৫তম বিসিএসে গেজেটেড হলাম। আলহামদুলিল্লাহ। আমি একা না, আমরা ২৫৯ জন গেজেটেড হলাম। কেউবা ১৪ বছর, কেউবা ৮ বছর, কেউবা ২ বছর পর অধিকার ফিরিয়ে পেলাম। এতগুলো বছর আমাদের কাছ থেকে কেন কেড়ে নেওয়া হলো জানেন? কেউ পারিবারিকভাবে বিএনপি সমর্থিত, আবার কেউ জামায়ত সমর্থিত। এমনও একজন আছে, যার সঙ্গে এক আওয়ামী লীগের সভাপতির মেয়ের বিয়ের কথা চলেছিল। পরে সে বিয়ে না হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা তাকে শিবির বলে প্রতিবেদন দেওয়ায়।
আমরা যারা এরকম বঞ্চিত ছিলাম, তাদের সবার গল্পগুলো অনেক করুন। ভেরিফিকেশন করতে গিয়ে আমার সত্তোরর্ধ্ব বাবাকে আটক করে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সময়টা ছিলো ২০১৬ সালের আগস্ট মাস। দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক পদে ভেরিফিকেশন করতে গিয়ে পুলিশ এবং এনএসআই মিলে সেই যৌথ হয়রানির কথা মনে পড়লে তাদের ক্ষমা করা কঠিন হয়ে যায়। তারপর দুই মাস পর বিসিএসের ভেরিফিকেশন। সেখানেও পুনরাবৃত্তি।
এভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের বৈষম্য ও বঞ্চনার বৃত্তে বন্দী হলাম আমরা। ৩৬তম বিসিএসে ভাইভা দিতে গিয়ে পিএসসির এক সদস্য বলেছিল ‘History repeats itself’। আধুনিক রাষ্ট্রকাঠামোতে বৈষম্য থেকে মুক্তির শেষ ঠিকানা বিচার বিভাগ। সেই ঠিকানায় রিট করলে হাইকোর্ট ২০২০ সালে ক্ষতিপূরণসহ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতে স্টে অর্ডার দিয়ে আবার নিয়োগ আটকে রাখে।
তার ভাষ্য, অবশেষে ৫ আগস্ট, নতুন স্বাধীনতা। হাজার ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যাত্রা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, খুনী সরকারের দলদাস আমলারা এখনো বহাল। ফলশ্রুতিতে যা হওয়ার তাই হলো। আমাদেরকে নতুন বৈষম্যের মধ্যে রেখে গেজেট প্রকাশ করলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জটিল প্রক্রিয়ায় সিনিয়রিটি দিলেও হাইকোর্টের রায়ের আলোকে আর্থিক ক্ষতিপূরন সম্পূর্ণ বাদ দিল।
ফয়সালের অভিযোগ, কি দুর্ভাগ্য, স্বৈরাচারীর জনপ্রশাসন সচিব এখনো হর্তাকর্তা। এ বিষয়ে কৈফিয়ত জানতে চাইলে জানানো হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সব সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করে পাঠালেও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আলী ইমাম মজুমদার এসব বাদ দিয়ে বৈষম্য বহাল রেখেছেন। তিনি অবসরে থাকাকালীন আমাদের বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠল, সেটার জবাব দিবেন তিনি নিশ্চয়ই দিবেন। তাঁর সুস্পষ্ট জবাব ছাড়া আমরা আদৌ যোগদান করব কিনা, সেটাও ভাবার বিষয়।