‘রানা প্লাজা’ নিষিদ্ধের নেপথ্যে, ছবির ভবিষ্যৎ জানালেন নিমার্তা



২০১৩ সালের এপ্রিলে ঘটে যাওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যা পাওয়া সাভারের রানা প্লাজা ধ্বস। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত সিনেমা ‘রানা প্লাজা’, গত ১০ বছরেও যা মুক্তি পায়নি।


সেন্সর বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ আদালত সবখানে আপত্তির জেরে আজও নিষিদ্ধ হয়ে আছে নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত সাইমন-পরীমনি অভিনীত ‘রানা প্লাজা’।


১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ‘রানা প্লাজা’ সিনেমাটি বলি হয়েছে বলে সিনেমা সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ অভিযোগ করছেন। আ. লীগের শোচনীয় পতনে পুরনো অনেক কিছুর মুক্তি মিলছে। সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেকেই দাবী তুলছেন, ‘রানা প্লাজা’ মুক্তি দেওয়ার। নির্মাতা নজরুল ইসলাম খান জানান, এ সিনেমায় তার তিন কোটি টাকা লগ্নি করা।


২০১৪-২০১৬ এই তিন বছর বার বার নিষেধাজ্ঞায় পড়ে ‘রানা প্লাজা’ নির্মাতা হতাশ হয়েছেন। এক পর্যায়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে সিনেমা নির্মাণই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তিনি আজও অধীর অপেক্ষায় আছেন, সরকার যেহেতু পরিবর্তন হয়েছে হয়তো ‘রানা প্লাজা’ এবার মুক্তি পেতে পারে। বললেন, এই সিনেমাটি অনেক সাধনা করে বানানো। আজও মুক্তির আশায় আছি।


কেন আটকানো হয়েছিল ‘রানা প্লাজা’?


পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘রানা প্লাজা’ উদ্ধার কাজে জড়িত ছিলেন তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, যিনি ছিলেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি। তিনি এই সিনেমা নির্মাণে অনেক ভাবে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। তার অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। যেহেতু তিনি রানা প্লাজার উদ্ধার কাজে সরাসরি দায়িত্বে ছিলেন। এজন্য সিনেমার ক্রেডিট লাইনে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। পরবর্তীতে তার রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। এটা আমার জানার কথাও নয়। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোই মনে হয় পাপ হয়েছিল। ‘রানা প্লাজা’ আটকানোর অনেকগুলো কারণ ছিল। আমি মনে করি, মূল কারণ ছিল সেনা কর্মকর্তাকে ক্রেডিট দেয়া। মূলত বিজিএমই এবং তৎকালীন বিটিভির এক কর্মকর্তার চেষ্টায় ‘রানা প্লাজা’ আটকে দেয়। আমি আক্রোশের শিকার হয়েছি।


রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সিনেমা না হয়েও রাজনীতির শিকার ‘রানা প্লাজা’, কেন?


নজরুল ইসলাম খানের বক্তব্য, সিনেমায় বিন্দুমাত্র রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নেই। শুধুমাত্র ভবন ধ্বস ও গার্মেন্টস সেক্টরের বাস্তব চিত্র দেখিয়ে সিনেমাটি বানাই। বাস্তবতার নিরিখে রানা প্লাজার বিল্ডিং ভাঙছে এমন প্রায় আড়াই’শ দৃশ্য ভিউজ্যুয়াল ইফেক্টে বানাই। যা আমাকে অনেক সাধনা ও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছিল। সিনেমাটি আঁটকানোর পর সর্বোচ্চ আদালতে রিট, ব্যান এবং আপলি এসব হতে থাকলো। তৎকালীন বিচারপতি এসকে সিনহা দেখে ‘রানা প্লাজা’ রিলিজ করতে বলেছিলেন। সেখান থেকে রিভিউ খারিজ হলে আমার পক্ষে আসে। মুক্তির তারিখ ঘোষণা করি। পরে আবার সিনেমা মুক্তি বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন বিজিএমই প্রেসিডেন্টের কাছে অনুরোধ জানাই। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। আজও ধুকে বেড়াচ্ছি।


‘রানা প্লাজা’ ওটিটিতে কী মুক্তি দেয়া সম্ভব?


সেন্সর বোর্ডের আপিল বিভাগের তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম, সেন্সর সদস্য প্রয়াত অভিনেত্রী কবরী, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার প্রত্যেকে বারবার সিনেমাটি দেখেছিলেন। সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে সিনেমা হলের জন্যই বানিয়েছিলাম ‘রানা প্লাজা’। তাহলে হলে কেন মুক্তি দেব না? আসলে মনোবলটাই ভেঙে যায়। এরপর ক্ষোভে আর সিনেমা বানাইনি। যদি কখনও ‘রানা প্লাজা’ মুক্তি দিতে পারি, তাহলে আবার সিনেমা করবো, নইলে আর জীবনে সিনেমা বানাবো না। সব আশা ছেড়ে দিয়ে আমি অপেক্ষায় ছিলাম সরকার একদিন পরিবর্তন হবে। ‘রানা প্লাজা’ ঠিকই মুক্তি পাবে।


নায়িকা চড়ে বিএমডব্লিউ-তে, নিঃস্ব পরিচালক 


বিগত সরকারের কাছে বহুবার গিয়েছি, অনুনয় করেছি কিন্তু আমার কথা কেউ শোনেনি। আমি তো দেশদ্রোহী কিছু করিনি। কোনো দলের কথা বলিনি। যা ঘটেছিল সত্য তাই বানিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, দেশ নতুন করে সেজে উঠছে, আমার সিনেমাটিও ছেড়ে দেয়া হবে। একটি সাধনার সৃষ্টি যখন বছরের পর বছর পুষে রাখতে হয় তখন সেই কষ্ট আর বলে বোঝানো যায় না। আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই, এই ‘রানা প্লাজা’র জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, চোখে পানি ফেলেছি, নিঃস্ব হয়ে গেছি, এই সিনেমায় রেশমা চরিত্রে নায়িকা পরীমনি প্রথম আলোচনায় ‘রানা প্লাজা’ সিনেমা করার মাধ্যমে। আজ সে বিএমডাব্লিউ চড়ে কিন্তু আমি হয়ে গেছি নিঃস্ব।


‘রানা প্লাজা’কে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা


২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি সরকারি তথ্য বিবরণীতে ‘রানা প্লাজা’ ছবিটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, শামীমা আক্তার প্রযোজিত রানা প্লাজা পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর আপিল কমিটি কর্তৃক জনসম্মুখে প্রদর্শনের উপযোগী নয় বলে বিবেচিত হওয়ায় চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন, ১৯৬৩ অনুযায়ী বাংলাদেশে চলচ্চিত্রটি সেন্সর সনদবিহীন ঘোষণা করা হয়েছে। সেন্সর সনদপত্রবিহীন রানা প্লাজা দেশের কোথাও প্রদর্শিত হলে চলচ্চিত্রটি বাজেয়াপ্তসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।


যে প্রেক্ষাপটে ‘রানা প্লাজা’ ছবিটি নির্মিত


রানা প্লাজা ধ্বসের ১৭ দিন পর ১০ মে ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমা নামের এক মেয়েকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে নজরুল ইসলাম খান তৈরি করেন ‘রানা প্লাজা’। পোশাকশ্রমিক ‘রেশমা’র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পরীমনি।