ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নতুন গল্প— শেখ হাসিনাকে উৎখাতে দায়ী আইএসআই

 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন খোদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দাবি করেছেন আরো অনেকে। তবে বিষয়টি একেবারে অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে এই টানাটানির মধ্যেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠি জড়িত থাকার নতুন গল্প নিয়ে হাজির ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।


জঙ্গি অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, মিজোরামে সবোচ্চ সর্তকতা ও নিরাপত্তা জারি করেছে ভারত।



ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। কয়েক সপ্তাহের আন্দোলনে অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলেও এই পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ।



এরইমধ্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে উঠা অভিযোগের প্রতিক্রিয়া দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের পছন্দে ক্ষমতার পরিবর্তন বেছে নিয়েছে। এর সঙ্গে মার্কিন প্রশাসন জড়িত হয়।



হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেন, এসবের পেছনে আমরা জড়িত নই। মার্কিন প্রশাসনের জড়িত থাকা নিয়ে যেকোনো প্রতিবেদন বা গুঞ্জন ডাহা মিথ্যা, একদমই সত্য নয়।



তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে সরকারের ভবিষ্যৎ দেশের মানুষই নির্ধারণ করবেন— এটাই আমাদের অবস্থান। তাই এমন কোনো অভিযোগ করা হলে আমি এখানে যা বলেছি, সব সময়ই তা বলবো। এটা একদমই সত্য নয়।


এদিকে ঘটনাবহুল ৫ আগস্টের পর থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ব্যাপক হারে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ যেকোনোভাবে প্রমাণের জন্য উঠে পড়ে লাগে ভারতের কিছু গণমাধ্যম। হালে পানি না পাওয়ায় বাংলাদেশের ছাত্র- জনতার বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবার হাজির নয়াদিল্লি। ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থার সূত্র ধরে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির একাধিক গণমাধ্যম।



প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র জনতার ভিড়ে মিশে ভয়াবহ সহিংসতা উসকে দিয়ে শেখ হাসিনা শাসনের ইতি টানার পরিকল্পনা সুকৌশলে পরিণতির দিকে নিয়ে গেছে পাকিস্তানের গয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। এ ঘটনার পেছনের সহযোগী হিসেবে ছিল একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী।



আইএসআই ও জঙ্গিগোষ্ঠীর উদাহরণ টানতে গিয়ে গত ২৩ জুলাই নরসিংদী ও ৫ আগস্ট শেরপুরের কারাগারে হামলা ও শত শত কয়েদি পালানোর বিষয়টি উল্লেখ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় গয়েন্দা সংস্থা। 



গাজীপুরের কাশেমপুর কারাগার থেকে কয়েদি পালানোর বিষয়টিও এড়ায়নি। বলা হয়েছে, কট্টর জঙ্গিরা ছাত্র জনতার ভিড়ে মিশে গিয়ে এই অপকর্ম করেছে। কারাগার থেকে লুট করা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি সংখ্যালঘুদের নির্যাতনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই হামলা ও লুটপাটে নেতৃত্ব দিয়েছে সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ছাত্রশিবির ছাড়াও তৎপর জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো।



জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার আল ইসলাম, লস্করি তইবা, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশসহ নয়টি নাম এ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।



এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম এলাকায় জঙ্গি হামলা ঠেকাতে ও অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় সবোচ্চ সর্তকতা ও নিরাপত্তা জারি করেছে। অনুপ্রবেশের চেষ্টা করায় গত শুক্রবার অন্তত এক হাজার মানুষকে পুশব্যাক করা হয়েছে দাবি করেছে ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)।