রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আসছে নতুন আইন



দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নতুন একটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে ‘পলিটিক্যাল পার্টিস অ্যাক্ট’ নামে ঐ আইনের খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।


তিনি বলেন, নতুন এই আইন প্রণয়ন হলে, রাজনৈতিক দলগুলোকে এর নিয়ম মেনেই পরিচালিত হতে হবে। খসড়া তৈরি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি চূড়ান্ত করা হবে। যারা এই আইন মানবেন না, তারা রাজনীতি করতে পারবেন না।


দেশের আইন অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, তবে তাদের নিবন্ধন নিতে হয়। ‘পলিটিক্যাল পার্টিস অ্যাক্ট’ মূলত একটি আইন, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন, পরিচালনা এবং আর্থিক হিসাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।


আইনের খসড়া তৈরি এবং চূড়ান্তকরণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আইনের খসড়া সংশোধন এবং চূড়ান্তকরণ করা হবে। যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে এমন আইনের প্রচলন রয়েছে। যুক্তরাজ্যে এই আইনটি ‘রাজনৈতিক দল, নির্বাচন এবং গণভোট আইন ২০০০’ নামে পরিচিত।


দেশে বর্তমানে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। তবে আরো ৮০টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এদের মধ্যে অনেক দল নিবন্ধন পায়নি। এসব দলগুলোর গঠন ও পরিচালনায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নতুন আইনটি আনা হচ্ছে।


অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি এরই মধ্যেই কয়েকজনকে অনুরোধ করেছি, একটি আইন তৈরি করে খসড়া আমার কাছে দিতে। আমরা আইন সংক্রান্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবো।


আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকার সময়কালে নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং বাক-স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে সীমিত ছিলো। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করার অভিযোগ রয়েছে।


নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দলগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। দলগুলোর ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে এবং আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট সীমা বেধে দেওয়া হতে পারে।


এই উদ্যোগ সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে- আইনটি প্রণয়ন হলে দলগুলোর স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়বে।


১৯৬২ সালে পাকিস্তানের সামরিক সরকারও এ ধরনের একটি আইন প্রণয়ন করেছিল, যা স্বাধীনতার পর বাদ দেওয়া হয়। তবে এবারের উদ্দেশ্য দলগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, দমন নয়। এখনো আইনটির চূড়ান্তকরণের সময়সূচি নির্ধারিত হয়নি।