ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ। আত্মগোপনে থেকে তিনি প্রবাসী এক বিএনপি নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই বিএনপি নেতাকে তিনি যেকোনও মূল্যে বিএনপির ওই শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে বলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এদিকে রবিবার (১১ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হলেও অতিরিক্ত কমিশনার হারুনসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কোনও কর্মকর্তা উপস্থিত হননি। কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন। যদিও আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব পুলিশ অফিসার ও সদস্যকে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। তবে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে যোগ দেওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ পুলিশের শীর্ষ অনেক কর্মকর্তা নানাভাবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। অনেকেই পরিচিত আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবীর মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। কর্মকর্তাদের কেউ কেউ চাকরি বাঁচানোর জন্য তদবির করছেন। কেউ কেউ মামলার আসামি হওয়া থেকে রেহাই পেতে চেষ্টা করছেন।
সূত্র জানায়, অনেকেই ‘সেফ এক্সিট’ পাওয়ার জন্য তদবির করছেন। এসব কর্মকর্তার অনেকেই ভারতসহ ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই সম্পদ গড়েছেন। কোনোভাবে দেশের বাইরে যেতে পারলে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ অন্তত এক ডজন কর্মকর্তা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন। তারাই আওয়ামী লীগ সরকারের ‘পারপাস সার্ভ’ করতেন। তারাই নানা কৌশলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন দমন করতেন। এসব কর্মকর্তা প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর একবার করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসতেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের সব পর্যায়েই আওয়ামীপন্থি এই কর্মকর্তাদের নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। পুলিশের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামীপন্থি এই কর্মকর্তারা সবসময় অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলন দমানোর নির্দেশ দিতেন। ঢাকার বাইরে পোস্টিং হওয়ার ভয়ে সবাই অন্যায় আদেশও মেনে নিতেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ ডিবিতে থাকাকালীন কয়েকজন মধ্যম সারির কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আইনবহির্ভূত সব কর্মকাণ্ড নিজের অনুগত কয়েকজন কর্মকর্তাকে দিয়ে করাতেন। এই কাজে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের কয়েকজন অতিরিক্ত উপকমিশনারও সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের দিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থও আদায় করতেন তিনি।
ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করেও অর্থ আদায়
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করেও বিপুল অর্থ আয় করেছেন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিবি হারুন। তিনি বিভিন্ন এলাকার বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ীদের ডেকে এনে বা ধরে এনে ছাত্র আন্দোলনে ইন্ধন দেওয়ার কথা বলে অর্থ আদায় করেছেন। উত্তরার এক ব্যবসায়ীকে ধরে এনে তার কাছ থেকে আট কোটি টাকা নিয়েছেন বলে পুলিশেরই দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এছাড়া বাড্ডা এলাকার ভিএলএক্স গ্রুপের মালিক ডেভিড নামে এক ব্যবসায়ীকেও ছাত্র আন্দোলনে অর্থ সহায়তা ও ইন্ধনের অভিযোগে ধরে আনা হয়। পরে অবশ্য তাকে মামলা দিয়ে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছিল।
সূত্র জানায়, ডিবি হারুন বড় অঙ্কের অর্থ নিজের হাতে নিতেন না। তিনি দুবাইয়ে তার একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির কাছে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে বলতেন। সেখান থেকে অর্থ চলে যেত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তার স্ত্রী ও সন্তান বসবাস করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও হারুন কল রিসিভ করেননি।