যমজ সন্তানের জন্মসনদ হাতে নিতেই ফিলিস্তিনি বাবা জানলেন সন্তানেরা বেঁচে নেই



ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় দুই নবজাতক যমজ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই যমজ শিশুর বয়স মাত্র তিন দিন। ঘটনার সময় তাদের বাবা তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে ও জন্মসনদ সংগ্রহ করতে স্থানীয় সরকারি অফিসে ছিলেন।


ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল বালাহ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত ওই যমজ নবজাতকের মধ্যে একজন ছেলে শিশু যার নাম ছিল অ্যাসার ও অন্যজন মেয়ে শিশু যার নাম ছিল আইসেল।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মঙ্গলবার মধ্য গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নবজাতক যমজ শিশু নিহত হয়েছে। ঘটনার সময় তাদের বাবা তাদের জন্মসনদ সংগ্রহ করতে স্থানীয় সরকারি অফিসে গিয়েছিলেন। গত শনিবার গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে জন্ম হয়েছিল ওই জমজ দুই শিশুর। কিন্তু তাদের ভবনে ইসরায়েলি বোমা হামলায় প্রাণ প্রদীপ নিভে যায় দুই নবজাতকের। মুহূর্তের মধ্যে ধূলিসাৎ হয়ে যায় পরিবারের সব আনন্দ। সন্তান জন্মের আনন্দ উদযাপনের ও সময় পাননি বলে জানান নিহত শিশুদের বাবা আবু আল-কুমসান। 


জানা গেছে, ইসরায়েলি হামলায় শুধু দুই সন্তানই নয়, স্ত্রী ও শাশুড়িকেও হারিয়েছেন আবু আল–কুমসান।


মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রী জুমানা আরাফা ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। ইসরায়েলি হামলা এবং সীমিত চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যেই চ্যালেঞ্জিং সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে মাত্র তিনদিন আগে তারা তাদের যমজ সন্তানকে পৃথিবীতে স্বাগত জানিয়েছিলেন। যমজ শিশুর জন্মের পর তাদের হৃদয় আনন্দে ভরে উঠেছিল এবং এই দম্পতি তাদের দুই ছোট বাচ্চাকে নিয়ে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ সাজাতে চেয়েছিলেন।


শিশুদের বাবা মোহাম্মদ আবু আল-কুমসান যখন স্থানীয় সরকারি অফিসে ছিলেন তখন তার প্রতিবেশীরা ফোন করে তাকে দেইর আল বালাহ শহরে তার ভবনে বোমা হামলার কথা জানায়। তিনি বলেন, আমি জানি না কি হয়েছে, আমাকে শুধু বলা হয়েছিল যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আমার বাড়িতে আঘাত করেছিল।


প্রতিবেশীদের খবর পেয়েই আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে ছুটে যান আল-কুমসান। মর্গের বাইরে জড়ো হওয়া তার পরিবারকে শোকে ভেঙে পড়তে দেখে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তার স্ত্রী এবং তাদের নবজাতক যমজ সন্তানও নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।


ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১১৫টি শিশু জন্মের পরপরই নিহত হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে এই হামলা সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলেও কোন মন্তব্য করেনি তারা।