শাহবাগে সম্প্রীতির শপথ শিক্ষার্থীদের



দেশে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়েছেন শিক্ষার্থী-শিক্ষক-সাংবাদিকসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন ও ‘একতার বাংলাদেশ’ এর সম্প্রীতি সমাবেশে এই শপথ নেয়া হয়। বুধবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বিকাল ৪টায় ‘একতার বাংলাদেশ’ এর মুখপাত্র তাহমীদ আল মুদাসসির এর সভাপতিত্বে এ সভা শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু সায়েম, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক শাফী মোহাম্মদ, ফাদার তপন ডি রোজারিও এবং ‘কালবেলা’ পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশও সম্প্রীতির আয়োজনে যুক্ত হয়। 


সম্প্রীতি কামনা করে শপথ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিক। শপথ বাক্যে বলা হয়,‘আমি শপথ করছি যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমার প্রতিটি পদচিহ্ন হবে ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখার একেকটি প্রতিরূপ। সাম্য এবং মানবিক মর্যাদা হবে আমার রাষ্ট্রের প্রতিটি অংশীজনের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধন। আমার কাছে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার যথাযথ বাস্তবায়নই হবে ব্যক্তিগত স্বার্থকে সমুন্নত রাখার একমাত্র রক্ষাকবজ। বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আমার কার্যক্রম এবং চিন্তার পরিসর জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছাকে সবসময় ক্ষমতায়িত করবে।



আরও বলা হয়, আমি জীবনের যেকোনো পর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করবো না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যদি নিপীড়নমূলক হয়ে ওঠে বা হয়ে উঠতে চায় তার বিপরীতে দাঁড়ানো হবে আমার একান্ত দায়িত্ব।


আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে সব ধরনের বিভাজনের পথ রুদ্ধ করে বাংলাদেশ হবে সব মানুষের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণের উর্বর ভূমি। সমাবেশে বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব সাহিত্য বিষয়ক অধ্যাপক ড. সাদিক মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা কোনো বৈষম্যের বাংলাদেশ চাই না। সবার ধর্ম পালনের অধিকার চাই। কোনো ভেদাভেদ চাই না। সাম্যের বাংলাদেশ চাই।’

অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘যতদিন দেশ থেকে কুচক্রী মহল বিতাড়িত না হবে, ততদিন আমাদের পাহারায় থাকতে হবে। কোনো ভাবেই কুচক্রী মহলকে ছাড় দেয়া যাবে না। দিল্লিতে পরিত্যক্ত স্বৈরাচার আছেন, অথচ তার ছেলে জয় বলেন, তার মা পদত্যাগ করেনি। সেখান থেকে তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সতর্ক থাকতে হবে। অবশ্যই ভেতরের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে হবে।’



তিনি বলেন, আমি জীবনের যেকোনো পর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করবো না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যদি নিপীড়নমূলক হয়ে ওঠে বা হয়ে উঠতে চায় তার বিপরীতে দাঁড়ানো হবে আমার একান্ত দায়িত্ব। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সকল ধরনের বিভাজনের পথ রুদ্ধ করে বাংলাদেশ হবে সকল মানুষের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণের উর্বর ভূমি।


এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’র কর্মসূচি শাহবাগে জমায়েত হওয়ার কর্মসূচি ছিল। বিকালে রাজধানী শাহবাগে আসতে থাকেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে তাদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে তারাও এসে এই ‘একতার বাংলাদেশ’ কর্মসূচিতে যোগ দেন। 

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আপনারা লক্ষ মানুষের সমাবেশ দেখেছেন, এরপর যদি মানুষের ওপর চোখ তুলে তাকানোর চেষ্টা করো তাহলে কোটি মানুষের সমাগমে পিষে ফেলবো। বাংলাদেশের মানুষ ষোলো বছর পরে নতুন করে স্বাধীনতার মুখ দেখেছে, সেই দিকে কেউ যদি নজর দেয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তার জায়গা বাংলাদেশে হবে না। 


তিনি বলেন, এই যে স্বৈরাচারের দোসররা একদিনে অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালায়নি। লুকিয়ে আছে আমাদের আশপাশে। যে পথেই নৌকার মাঝিরা হাঁটুক না কেন, তাদেরকে নৌকাসহ ডুবিয়ে দেয়া হবে। আমরা আমাদের একটি ধাপ পার করেছি মাত্র। যতদিন না জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করতে পারি, ততদিন রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যে গর্ত থেকে ফ্যাসিস্টরা বের হওয়ার চেষ্টা করবে সে গর্তে তাদের ঢুকিয়ে তালা লাগিয়ে দিতে হবে।

আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, অধিকার আদায়ে আমরা সবসময় রাজপথে থাকবো। ঢাকার সব ছাত্র ও জনতা এক হলে আমরা শহীদদের স্মরণে শাহবাগ থেকে রাপা প্লাজা অভিমুখে পদযাত্রা, মোমবাতি প্রজ্জালন ও নিহত হওয়ার ঘটনাস্থলে এক মিনিট নীরবতা পালন করে দোয়া করবো। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ। পরে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি এবং শহীদদের স্মরণে শাহবাগ থেকে ধানমণ্ডির রাপা প্লাজা অভিমুখে পদযাত্রা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ‘একতার বাংলাদেশ’।