পালিয়েছেন ঝিনাইদহের মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৭১২ জনপ্রতিনিধি



ঝিনাইদহ জেলার ৭১২ জন জনপ্রতিনিধি পালিয়ে গেছেন। জনতার গণআন্দোলনে তীব্র জনরোষের কারণে অবৈধভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এসব জনপ্রতিনিধি পালিয়ে গেছেন বলে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রকাশ থাকে যে, গত ৪ঠা আগস্ট স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে করতে জেলা বিএনপি’র সভাপতি এড. এমএ মজিদের কলাবাগনে তার বাসভবন, প্রাইভেটকার, ৫টি ম মোটরসাইকেল, জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আক্তরুজ্জামানের ওষুধের দোকান জেলা বিএনপি’র কার্যালয়সহ শহরে অবস্থিত বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘর-বাড়িতে  পেট্রল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।



গত ৫ই আগস্ট স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরণ জনরোষে আক্রান্ত হয়ে নিহত হয়েছেন। গত সোমবার ৫ই আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তার লাশ প্রকাশ্যে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে দীগম্বর করে ৪ ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা হয়। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে ৩দিন তার লাশ মর্গে পড়ে থাকলেও কেউ নিতে আসে নাই। আঞ্জুমান মুফিদুল যখন তার লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন হিরণের প্রতিবেশীরা এসে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন কাজ সম্পূর্ণ করেন। এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জেলার বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী জনগণের ধাওয়া খেয়ে অনেকটা দিগম্বর হয়ে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। সারা জেলা থেকে এমন আতঙ্কজনক খবর আসার কারণে জেলার ৬ উপজেলা চেয়ারম্যান, ৬ পৌর মেয়র, ভাইস চেয়ারম্যান ও ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বেশির ভাগ ইউপি মেম্বার গা-ঢাকা দিয়েছেন।


ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তরের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলা ও পৌর মেয়রসহ জেলায় সর্বমোট ৯৩৭ জন জনপ্রতিনিধি আছেন। এরমধ্যে ৬ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ১২জন ভাইস চেয়ারম্যান, ৬ জন পৌর মেয়র, ৩৬ জন কাউন্সিলর, ৬৭ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ৮০৪ জন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঞা খুরশিদ আলম ছাড়া ৬৬ জন চেয়ারম্যানই মঙ্গলবার অফিস করেননি। ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজলও গত মঙ্গলবার অফিস করেননি। সোমবার রাতে তার বাড়িতে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ কারণে তিনি গা-ঢাকা দিতে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে গত রোববার (১১ই আগস্ট) ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার মেয়র কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল আর্মির প্রহরায় বাসা থেকে অফিসে এসেছেন এবং অফিস শেষে আবার আর্মির প্রহরায় বাসায় ফিরে গেছেন। এ বিষয়ে মেয়র কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল জানান, আমি অসুস্থতাজনিত কারণে গত ১লা আগস্ট ঢাকায় গিয়েছিলাম আর গত শনিবাবর ১০ই আগস্ট ঝিনাইদহ এসেছি যে কারণে কয়দিন অফিস করতে পারি নাই। হরিণাকুণ্ডু পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়র ফারুক হোসেনের চেয়ার ফাঁকা। ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। শৈলকুপা পৌরসভার মেয়র কাজী আশরাফুল আজমকে অফিসে দেখা যায়নি। কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম অনেক আগেই পালিয়ে গেছেন। জেলার বিপুলসংখ্যক জনপ্রতিনিধির পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ সাইদুল আলম জানান, চরম দলীয়করণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে এ সব জনপ্রতিনিধি জনরোষের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারাও জনরোষের কারণ বলে তিনি মনে করেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রথিন্দ্রনাথ রায় জানান, তিনিও এমন কথা শুনেছেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদের অনেক সদস্য আছেন যারা প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আপাতত তারাই দায়িত্ব পালন করতে পারেন।