আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজশাহী মহানগরীর মেগা প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পের কাজ হুট করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন নগরবাসী। অবকাঠামোগত কাজ চলায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো এখন যাতায়াতের অনুপযোগী।
এছাড়া সিটি করপোরেশন ভবন ধ্বংস হওয়ায় সহসাই কোনো সদুত্তর মিলছে না কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। নগরবাসীর দাবি, যে সরকারই আসুক না কেনো প্রকল্পগুলো যেনো দ্রুত শেষ করে নাগরিকদের স্বস্তি দেয়া হয়।
দশ দিন আগেও যেখানে টুং টাং শব্দে দিনভর নির্মাণ কাজে ব্যস্ত ছিলেন শ্রমিকরা সেখানে এখন শুধু নীরবতা। সড়কে পড়ে রয়েছে মূল্যবান ইস্পাত, রড থেকে শুরু করে নির্মাণ সামগ্রী। বলছি রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার মেগা প্রকল্প পাঁচটি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজ বন্ধের কথা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় বাজেটের এই কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। ক্যাম্পে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ভারি মেশিনপত্র। পাওয়া যাচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের।
রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকা থেকে শুরু করে কাশিয়াডাঙা পর্যন্ত চারটি স্পটে অন্তত ৭টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এই মহাযজ্ঞ চলছে। গত ৫ আগস্ট বিকেলে এই নির্মাণ সামগ্রীর ওপরও লুটপাট শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারায় কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্টরা। এখন কবে নাগাদ এই কাজ শুরু হবে তা বলতে পারছেন না এখানকার নিরাপত্তায় থাকা কর্মীরা।
বছর খানেক ধরে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যে নির্মাণকাজ চলছিল তাতে কিছুটা সমস্যা হলেও হাসি মুখে মেনে নিয়েছিলেন এলাকাবাসী। তবে বর্তমানে প্রকল্পগুলো যে অনিশ্চয়তায় পড়েছে তাতে রীতিমতো চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয়রা। না পারছেন সড়কে চলতে, না পারছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো চালাতে। নির্মাণজজ্ঞ দ্রুত শেষ করার আবেদন জানিয়েছেন তারা।
এদিকে নগর ভবন পুড়ে যাওয়ায় এখনও কার্যালয়ে কাজ শুরু করতে পারেননি প্রকৌশলীরা। কোন প্রকল্পের কি অবস্থা সবই অজানা। তবে প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, মেগা প্রকল্পগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো ভাবেই যেনো এই কাজ আটকে গিয়ে নগরবাসীর অসুবিধার কারণ না হয়ে দাঁড়ায় তা দেখা হচ্ছে।
চলমান রেলওয়ে ওভারপাসগুলো নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশন ৮২১ দশমিক ৯৩ কোটি টাকার সংস্থান করেছে। ‘সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের অধীন তিনটি প্যাকেজে পাঁচটি ফ্লাইওভার ও ১৯টি অবকাঠামো নির্মাণ করবে। চুক্তি অনুযায়ী নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কোর্ট স্টেশন রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ৫২১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর রেলক্রসিংয়ে ৮৯৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ভদ্রা রেলক্রসিং ৫২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ফ্লাইওভার নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মহানগরীর বর্ণালী সংলগ্ন বন্ধ গেইট এবং নতুন বিলসিমলা রেলক্রসিং পর্যন্ত ১২৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ সমন্বিত ফ্লাইওভার নির্মাণে নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।