ধনী হওয়ার জন্য পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি



ধনী ও সম্পদশালী হওয়ার জন্য চিঠি পাওয়া গেছে কিশোরগঞ্জের পৌর শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত পাগলা মসজিদের দানবাক্সে। শনিবার পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হলে টাকা স্বর্ণালংকারসহ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়। এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি চিঠিও মেলে। এর মধ্যে বেনামে একটি চিঠি পাওয়া যায়।


এতে ওই ব্যক্তি লিখেছেন, ‘হে আল্লাহ আমাকে এ বছরে কোটি কোটি টাকার সম্পদশালী ও হালালভাবে ধনী বানিয়ে দাও। আমি ধনী হলে প্রতি বছর আপনার এই মাসজিদে ১টা ছাগল বা সমপরিমাণ টাকা দেবো আমার মৃত্যু পর্যন্ত। আমি কোনো কাজে সফল হয়নি। তুমি দয়া করো আমার ওপর। আমি যেন জীবনে সফল হতে পারি এবং আমার যত জানা-অজানা শত্রু আছে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি। আমিন, আমিন আমিন।’



এর আগে, সকাল সাড়ে ৭টায় ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে ৯টি লোহার দানবাক্স খোলা হয়। ৩ মাস ২৬ দিন পর আজ দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এতে মিলে রেকর্ড ২৮ বস্তা টাকা। এছাড়াও মিলেছে স্বর্ণালংকারসহ বৈদেশিক মুদ্রা।



কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এছাড়াও এ সময় বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।



কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ৩ মাস ২৬ দিন পর শনিবার সকালে পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। এবার দিন বেশি হওয়ায় একটি ট্রাংক দেওয়া হয়েছিল। পরে মসজিদের দোতালায় এনে টাকা গণনার কাজ চলছে।


টাকা গণনা কাজে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কাজী মহুয়া মমতাজ, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা আনোয়ার পারভেজসহ মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ মোট ৩৫০ জনের একটি দল অংশ নিয়েছেন।



এর আগে, সর্বশেষ গত ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া যায়। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। ২২০ জনের একটি দল দীর্ঘ সাড়ে ১৮ ঘণ্টায় এ টাকা গণনা কাজে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়।



মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেলে ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।



মসজিদটিতে এবার আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।