সুইজারল্যান্ডের স্বনামধন্য ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব পাবলিক হেলথে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় পরিচ্ছন্ন বায়ু নিশ্চিত করণে জরুরি আহ্বান: বাড়তে থাকা কিন্তু উপেক্ষিত জনস্বাস্থ্য সংকট’ শিরোনামে সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এতে বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের নিচে বা সমান থাকতে হবে বলে নির্দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। এর বেশি হলে হাঁপানী, শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ ও সংক্রমণ, ফুসফুসের ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও মানসিক সমস্যা হতে পারে বলে উঠে আসে এ গবেষণায়।
গবেষণায় বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, ২০২৩ সাল দেশজুড়ে বাতাসে এই অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার মাত্রা ছিল প্রায় ৮০ মাইক্রোগ্রাম। যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে প্রায় ১৬ গুণ বেশি। যার ফলে বায়ু দূষণে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থানে অবস্থান করছে। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত ও মালদ্বীপ।
এ গবেষণায় গবেষক হিসেবে ছিলেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বায়োস্ট্যাটিসটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মেসবাহউর রহমান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ডা. শুভজিত কুমার কুণ্ডু, বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত জাকি ফারহানা ও তুরস্কের ইস্তাম্বুল গেলিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অ্যান্টন আব্দুলবাসাহ্ কামিল।
গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক ও গবেষক মোহাম্মদ মেসবাহউর রহমান বলেন, ইউরোপে ২০২১ সালে বাতাসে বিদ্যমান এই অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা জনিত বায়ুদূষণের কারণে ৪ লাখ ৩২ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অতি ক্ষুদ্রকণাজনিত বায়ু দূষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চললে যেকোনো দেশের গড় আয়ু আরো ৫.৪ বছর বেড়ে যেত।
এ গবেষক বলেন, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পরিমাপক সংস্থা আইকিউ এয়ারের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষিত বায়ুর তালিকার শীর্ষে থাকা ৫০টি শহরের মধ্যে ৪২টিই দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত। এইসব এলাকায় বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন শিশু, বয়স্ক মানুষ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা মানুষ, গর্ভবতী নারীর জন্য এই দূষিত বাতাসে শ্বাস নেওয়া মারাত্মক পরিণাম ডেকে আনতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার প্রকৃতি এই অঞ্চলের বায়ুদূষণজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করেছে।
দূষণ প্রতিকারে এ গবেষক বলেন, বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়ার সবকটি দেশই বিপর্যস্ত এবং এটি একটি জনস্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থা। এসব দেশে প্রায়শই এটাকে যথেষ্টভাবে গুরুত্বারোপ করা হয় না। এই অঞ্চলে বায়ুদূষণ একটি আঞ্চলিক সমস্যা। তাই এটি মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে দেশগুলো এই ইস্যুতে ফলপ্রসূভাবে তাদের তহবিল ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং অর্জিত জ্ঞান বিনিময় ও সবাইকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এগিয়ে আসতে পারে।
এ গবেষণায় দূষণ মোকাবেলায় বায়ুদূষণের টেকসই নীতিনির্ধারণে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক অবস্থা, স্থানীয় জলবায়ুর প্রকৃতি, উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ড, সাক্ষরতার হার প্রভৃতি বিষয়কে আমলে নিতে এ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান গবেষকরা।
প্রসঙ্গত, এ গবেষণার মাধ্যমে গবেষকরা ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্যজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের পূর্বপ্রতিশ্রুত আর্থিক অনুদান নিয়ে এগিয়ে আসতে সম্পদশালী দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণে সচেষ্ট হয়েছেন।
সূত্র: www.ssph-journal.org