১৫ থেকে ২১শে আগস্টের মধ্যে আওয়ামী লীগ দেশে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তারা লাগাতার রাজপথে অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময়ে দলগুলো মিছিল এবং সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। এসব কর্মসূচি সর্বদলীয় ঐক্যে, জনতার মঞ্চ কিংবা দলগুলোর দলীয় ব্যানারে করা হবে। এরই অংশ হিসেবে গত সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠকের মূল এজেন্ডাই ছিল ১৫ থেকে ২১শে আগস্ট দেশে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা তৈরির বিষয়বস্তু। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও সরকারের করণীয় বিষয়ে নেতারা তাদের মতামত দেন। মতামত শেষে রাজনৈতিক দলগুলো এ সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হয়, আওয়ামী লীগ দেশে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সবাই মিলে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে।
আজ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে দলটি। শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে গণহত্যা এবং হাসিনাসহ তার খুনি দোসরদের বিচারের দাবিতে আজ ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিএনপি’র উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আগামী শুক্রবার বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিবস উপলক্ষে তার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা এবং সামপ্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে দলটি। পাশাপাশি বিএনপি’র অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোও পৃথক পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা আজ এবং বৃহস্পতিবার সারা দেশে জেলা, মহানগর, থানা, উপজেলা এবং পৌরসভায় বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সামনে আরও কর্মসূচি দেয়া হতে পারে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ১৫ই আগস্টকে কেন্দ্র করে জাতীয় নির্বাচনের মতো ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু জাগ্রত ছাত্র-জনতা সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, কর্মসূচি এখনো ঠিক হয়নি। বৈঠক করে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হলে আপনাদের জানিয়ে দেয়া হবে। গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি মানবজমিনকে বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। এটাকে এখন রক্ষা করতে হবে। সেই লক্ষ্যের দিকে এটা নিয়ে যেতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নৈরাজ্য প্রতিরোধ করতে হবে। এই নৈরাজ্য তৈরির যে চেষ্টা চলছে, তা প্রতিহত করতে আমরা বৈষম্যবিরোধীদের তৎপর হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, ১৫ই আগস্ট থেকে দলীয় কার্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট পয়েন্টে তাদের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন। বিভিন্ন স্পটে মিছিল ও সমাবেশ হবে। ঢাকাসহ সারা দেশে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হবে। ইতিমধ্যে এই নৈরাজ্য প্রতিহত করতে সারা দেশে মন্দির, থানা এবং হিন্দুদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও পাহারা দিচ্ছে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। এটা আরও জোরদার করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আতঙ্কিত নাগরিকদের স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সার্বক্ষণিক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাসহ অঙ্গ-সংগঠনের কর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্পট এবং সারা দেশে মাঠে নেমেছেন।
তারা বলছেন, ১৫ই আগস্ট দেশকে অস্থিতিশীল করার যে হীন পাঁয়তারা, প্রোপাগান্ডা চলছে তা কঠোর হস্তে দমন করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ছাত্র-জনতাকে সতর্ক থাকতে হবে। ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে পতিত স্বৈরাচার দেশকে আবারও গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এ জন্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে সচেতন ও সজাগ থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের (নুর) সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান মানবজমিনকে বলেন, ১৫ থেকে ২১শে আগস্ট দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য আওয়ামী লীগ চক্রান্ত করছে। এটা প্রতিহত করতে আমরা রাজপথে থাকবো। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো এ সময়ে যার যার জায়গা থেকে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।
গণঅধিকার পরিষদের (মিয়া মসিউজ্জামান) সদস্য সচিব ফারুক হাসান মানবজমিনকে বলেন, আমরা আজ থেকে ২১শে আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবো। এ সময় আমরা মিছিল ও সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেবো।