গত সরকারের সময় দেশের অনেক গুণী শিল্পীকে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার, শিল্পকলা একাডেমিসহ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলোতে কালো তালিকায় রাখা হয়েছিল। ভিন্নমতের অনেক শিল্পী বঞ্চিত হয়েছেন বছরের পর বছর। সে তালিকায় ছিলেন মনির খান, কনকচাঁপা, বেবী নাজনীন, রিজিয়া পারভীন, আসিফ আকবর, সোহেল মেহেদীসহ অনেকে। এরমধ্যে কনকচাঁপা ৭ বছর ধরে ছিলেন কালো তালিকাভুক্ত। এ সময়ে কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হতো না তাকে। এক সময় যে ছিলেন প্লে-ব্যাকের সম্রাজ্ঞী, সেই কনকচাঁপার গানের সংখ্যাও কমতে থাকে ধীরে ধীরে। এদিকে ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। এই আন্দোলনের শুরুতেই কনকচাঁপা ছিলেন শিক্ষার্থীদের পক্ষে। একটা সময় বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। এ কারণেই হয়তো বিগত সরকারের আমলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাকে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি গত ৭ বছর বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়েছি। তবে আমি হাসিমুখে সব সয়েছি। নিজেকে সবসময় ভালো রাখার চেষ্টা করেছি। এই সময়ে রান্নাবান্না, পরিবারের আনন্দে ডুবে থাকার চেষ্টা করেছি। অনেক সমস্যা হলেও অভিযোগ করিনি। এ শিল্পী বলেন, আমাকে ৭ বছর যেভাবে বোবা করে রাখা হয়েছে তা বর্ণনাতীত। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কোনো কিছু লিখতে
পারতাম না। শুধু তাই নয়, আমি গান গাইতে পারিনি। একজন শিল্পী যদি গান গাইতে না পারেন তবে বোবা হয়ে যাওয়াই ভালো। তিন দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ার কনকচাঁপার। চলচ্চিত্রে তার গানের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। নিগৃহীত হওয়ার ব্যাপারে এ শিল্পী বলেন, গত ৭ বছরে আমার কোনো গান বেতার কিংবা বিটিভিতে প্রচার হয়নি। শিল্পকলা একাডেমিতে ডাকা হয়নি। নতুন শিল্পীদেরও গাইতে দেয়া হয়নি আমার গান। আর সরকারি অনুষ্ঠানে তো আমি ব্ল্যাক লিস্টেডই ছিলাম। এদিকে গত সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়া প্রসঙ্গে এ শিল্পী বলেন, সবার এমন অবস্থা হয়েছিল গত সরকারের আমলে যে কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দেখিয়ে দিয়েছে তারা অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করতে পারে না। আমি তাদের স্যালুট জানাই। আর অন্তর্বর্তী সরকার যেন সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারে তার জন্য আমাদের সবার সহযোগিতা করা উচিত। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটা সুন্দর দেশ আমরা গড়বো।