কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির কর্মসূচি চলাকালে সরকারি দুই সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিত। এমনকি তখনকার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকও সরাসরি ফোন করে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সরকারি সংস্থাগুলো ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেনি; বরং তার বদলে নানা সময়ে নানা বক্তব্য দিয়েছিলেন জুনাইদ আহ্মেদ। তিনি সামনে এনেছিলেন ইন্টারনেট অবকাঠামোয় অগ্নিসংযোগের কথা।
দেশে গত ১৭ জুলাই (বুধবার) রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত নয়টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। টানা পাঁচ দিন সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা বন্ধ ছিল ১৩ দিন।
২৮ জুলাই বেলা দেড়টার দিকে এনটিএমসি থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরদের বলা হয়, ইন্টারনেট সচল হবে। তবে তার আগে অপারেটরদের ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ভাইবার, ইমো, ইউটিউব, বিপ, সিগন্যাল, স্কাইপ ও বটিম বন্ধ করতে হবে।
কখন, কোন মাধ্যমে ও কোন সংস্থা ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল, তার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে। জানা যায়, ১৫ জুলাই (সোমবার) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে আরেক নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বলা হয়।
পরদিন ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) দুপুরের দিকে বিটিআরসির একই বিভাগ থেকে দেশের ৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ আসে। সঙ্গে উল্লেখ করা হয়, এই নির্দেশের ক্ষেত্রে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন রয়েছে। বিটিআরসি এই মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা।
ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বিটিআরসির একজন কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হতো না।
সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি ও আইটিসি সূত্রে জানা যায়, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় বিটিআরসি ব্যান্ডউইডথ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। আইটিসি কোম্পানিগুলো লিখিত আদেশ চাইলে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়। রাত নয়টার মধ্যে পুরো দেশ ইন্টারনেট–বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত বিটিআরসি নজরদারি করতে থাকে।