পুলিশের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত কাজে অধস্তন সদস্যকে ব্যবহার করতে পারবেন না। এছাড়া বাহিনীতে উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিয়োগের ক্ষেত্রে সরাসরির চেয়ে বিভাগীয় সদস্যদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। মানুষকে হয়রানির জন্য ট্রাফিক পুলিশের রেকার-বাণিজ্য বন্ধ করা হবে।
পুলিশ সংস্কারের অংশ হিসেবে নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের দাবির মুখে এমন ৭টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এগুলো নির্দেশনা আকারে তৈরির জন্য বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তিন দিনের মধ্যে নির্দেশনা তৈরি করবে।
পুলিশ সদর দফতরের হেলথ, ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড পেনশন শাখায় তৈরি করা একটি চিঠি থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, ১১ দফা দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানে থাকা নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তারা টানা পাঁচ দিন কর্মবিরতি পালন করেন। পরে ১১ আগস্ট আন্দোলনকারী প্রতিনিধিরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেই সভায় ৭টি দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
গেল জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরে তুমুল গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার সেই আন্দোলনে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে ৪০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য নিহত হন। আতঙ্কে বেশিরভাগ থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে।
এ পরিস্থিতিতে পাঁচ দিন ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন পুলিশের নন-ক্যাডার সদস্যরা। ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ জেলাগুলোর পুলিশ লাইন্সে পুলিশের ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ ঝাড়েন, সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার চান।
এরপর পুলিশ বাহিনী সংস্কার আন্দোলন ২০২৪-এর ১১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত ডিআইজি নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ্য করা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের অধস্তন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে পিআরবি অনুসারে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করা হবে। ব্যক্তিগত কাজে কোনো সদস্যকে ব্যবহার করা যাবে না। কনস্টেবল থেকে সকল পর্যায়ে অফিসারদের পোস্টিং-বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। সার্জেন্ট মার্জ করে এসআই আর এটিএসআইকে মার্জ করে এএসআই পদে রূপান্তর করা হবে। সাবইন্সপেক্টরে ৭৫ শতাংশ পদ বিভাগীয় অফিসার দ্বারা আর ২৫ শতাংশ পদ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হবে।
জনগণের স্বার্থে ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবৈধ রেকার-বাণিজ্য বন্ধ থাকবে ও ট্রাফিকের মামলার কোনো টার্গেট থাকবে না।
চিঠিতে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি মিয়া করিম, বেলাল উদ্দিন, মিলন মাহমুদকে এই নির্দেশনা তৈরি করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কমিটির এক সদস্য বলেন, এগুলো তাদের ন্যায্য অধিকার। আমরা নির্দেশনা তৈরি করে পুলিশ সদর দফতরে জমা দেবো।