ঢাকা : ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন দিতে কালক্ষেপণ করলে হাসিনা সরকারের চেয়েও অন্তর্বর্তী সরকারের পরিণতি ভয়াবহ হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বামপন্থী ছাত্রনেতারা।
শনিবার (১৫ মার্চ) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাম সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। মাগুরার আট বছর বয়সী শিশু আছিয়াসহ দেশজুড়ে সংঘটিত সব হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দাবিতে বামপন্থী সংগঠনগুলো আজ গণমিছিলের কর্মসূচি ডেকেছিল।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল বলেন, আমরা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছিলাম। কিন্তু লক্ষ্য করছি এখনও সারাদেশে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, লুটতরাজ চলছে। মব জাস্টিসের নামে সারাদেশে লুটপাট, নৈরাজ্য চলছে। সরকার ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে কোনো মব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আমরা লক্ষ্য করছি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী লুটপাট, অর্থপাচার, হত্যা, ধর্ষণ, দখলের সঙ্গে জড়িত ছিল, অবৈধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তারা গ্রেফতার হচ্ছে না।
আমরা গত ৭ মাসে বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো সফলতা দেখিনি। তাই কালক্ষেপণ না করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ অযোগ্য উপদেষ্টা ও অযোগ্য আমলাদের সরিয়ে দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিন। অন্যথায় বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের চেয়েও আপনাদের পরিণতি ভয়াবহ হবে।” বলেন- গৌতম চন্দ্র।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন বলেন, জুলাই-আগস্টজুড়ে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে বিতাড়ন করা হয়েছে। বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙক্ষায় লাখো মানুষ এই গণআন্দোলনে সামিল হয়েছিল। মানুষ আশা করেছিল হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে তারা একটা নিরাপদ সমাজ পাবে, পাবে স্বস্তির জীবন। কিন্তু ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা থাকলেও বারবার আমাদের আশা ভঙ্গ হয়েছে। সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। অভ্যুত্থানের পরপরই বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। মব সন্ত্রাসের নামে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের হত্যা, রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা, চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী হত্যাসহ কোনো অপরাধের বিচার করতে অন্তর্বর্তী সরকার সামর্থ হয় নাই। সরকারের ব্যর্থতা এবং বিচারহীনতার দীর্ঘ ইতিহাস অপরাধীদের অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছে।
পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে নানা গুম, খুন, ধর্ষণের বিচার করার সুযোগ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছিল এবং এখনও আছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, তনু হত্যাকাণ্ড, আফসানা হত্যাকাণ্ড, নুসরাত হত্যাকাণ্ড, মুনিয়া হত্যাকাণ্ড, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দ্বারা নোয়াখালীতে ধর্ষণ, হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা-লুটপাট, শ্রমিক হত্যার বিচার না করে এই সরকার স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের দীর্ঘ বিচারহীনতাকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার অভ্যুত্থানের ৭ মাস পার হলেও জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসা এবং শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মুখে অভ্যুত্থানের চেতনার কথা বললেও কার্যত তার কোনো ফলাফল দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে না। বরং দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মব সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতা প্রতীয়মান হয়েছে। বলেন রায়হান উদ্দিন।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, জুলাই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক বৈষম্যকে বিলোপ করা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বারবার নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম গণ অভ্যুত্থানের পর তনু, মুনিয়া, নুসরাতের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার হবে। আমরা নারীরা বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি। দেশের মধ্যে মবে প্রায় শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই সরকারকে মনে করিয়ে দিতে এখানে দাঁড়িয়েছি।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, সাগর-রুনীর হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। আমরা আওয়ামী লীগের আমলের হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার দাবি করছি। এছাড়া জুলাই আন্দোলনের হত্যার বিচার দাবি করছি।
বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু বলেন, আমরা সারাদেশে অব্যাহত হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার দাবি করছি। আমরা আফসানা, তনু, মুনিয়া, আছিয়াসহ সকলের হত্যার বিচার দাবি করছি।
কর্মসূচিতে সাত দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-
১. শিশু আছিয়াসহ সকল হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার করতে হবে।
২. ‘ব্যর্থ’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে।
৩. জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।
৪. মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলাকারী মব সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে।
৫. চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ, যৌথ বাহিনী দ্বারা শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে।
৬. সাগর-রুনি, তনু, আফসানা, মুনিয়াসহ পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমলে সংগঠিত হত্যার বিচার করতে হবে।
৭. হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা, লুটপাটের বিচার করতে হবে।