আকাশে উড়ে গেল মানুষ, জমিনে রইল শুধু কাপড়!

 

বোমার আঘাতে আত্মার সাথে দেহও আকাশে উড়ে গেল। কোন সিনেমায় নয়, ৩ এপ্রিল গাজায় দেখা গেছে এমন ভয়াবহ করুণ দৃশ্য। বিশ্বজুড়ে তখনও কাটেনি ঈদের আমেজ, এর মধ্যেই আবারও মৃত্যুপুরীতে রূপ নিল গাজা। অসংখ্য নিষ্পাপ শিশু ও নারী হারিয়েছেন প্রাণ। তবে বরাবরের মতই চুপ রয়েছে বিশ্বের বড় বড় মানবাধিকার সংস্থাগুলো।


৪০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনের বাসিন্দা হিমাম আল রিফি ধ্বংসাস্তুপ থেকে একে একে বের করছেন এক নবজাতকের পরনের কাপড়। কিন্তু এই কাপড় গায়ে দেয়ার জন্য কেউ বেঁচে নেই। ৩ এপ্রিলের হামলায় হিমামের অন্তঃসত্বা বোন, বোনের স্বামী ও তাঁর মা সবাই নিহত হয়েছেন। শুধু রয়ে গেছে সেই অনাগত সন্তানের পোশাক গুলো।



হিমাম রয়টার্সকে জানান, “যুদ্ধ শুরুর এক মাস আগে আমার বোনের বিয়ে হয়েছিল। তার গর্ভাবস্থার ৯ম মাস চলছিল। প্রথম সন্তান পৃথিবীতে আসবে তাই সে অনেক খুশি ছিল। কিন্তু আমার বোন চলে গেছে, তার স্বামী ও গর্ভের সন্তানও চলে গেছে। এই পোশাক গুলো সে তার বাচ্চার জন্য প্রস্তুত রেখেছিল। সে খুশি মনে অপেক্ষা করছিল।”


হতাশামিশ্রিত কণ্ঠে রিফি জানান, এই পোশাকগুলো তার বোন নিজের অনাগত সন্তানের জন্য রেখেছিল। কিন্তু ৩ এপ্রিলের হামলায় সবাই চলে গেছে। রয়ে গেছে শুধু কাপড়গুলো। রিফি এতদিন দার আল-আরকাম স্কুলে তাবুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সবকিছুই মিলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় নিজের ৬ সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবেন তিনি তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। 


তিনি বলেন,“এই স্কুলে এতদিন আমরা ছিলাম। এখানি আমি আমার মা’কে হারিয়েছি, বোন ও বোনের অনাগত সন্তানকে হারিয়েছি। ধ্বংসাস্তুপের নিচ থেকে যে মরদেহ গুলো বের করেছি তারা সবাই নিরীহ বেসামরিক লোক। তাদের কাছে কোন অস্ত্র বা অবৈধ কিছুই ছিল না।”


যদিও ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর দাবি এই স্কুলটি ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের একটি গোপন আস্তানা ও কমান্ড সেন্টার ছিল। কিন্তু গুড়িয়ে দেয়া স্কুল ভবন থেকে বেশিরভাগই নারী ও শিশুদের মরদেহ বের করা হয়েছে। হিমাম আল রিফি বিশ্ববাসীর কাছে প্রশ্ন রেখেছেন কি দোষ ছিল তার বোন আর বোনের বাচ্চার যে কিনা কখনও পৃথিবীর আলোই দেখেনি “আমার বোন, তার স্বামী ও তার অনাগত সন্তান সবাই কেন মারা গেল? কি দোষ ছিল তাদের? সেই বাচ্চাটার কি দোষ ছিল? সে তো কখনও পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগই পেল না। অবশ্য তারা সবাই এখন আল্লাহ’র কাছে নিশ্চিন্তে আছে।”


জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাসহো আরও বেশ কিছু সূত্র নিশ্চিত করেছে যে শুধুমাত্র গত ২ সপ্তাহে ফিলিস্তিনে অন্তত ১৩০৯ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। আর নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে ঠিক কবে থামবে এই হত্যাযজ্ঞ?